জয়নুল আবেদীন, সাঘাটা ►
আত-দিন (রাত-দিন) যাগা থেকে সরে যাওয়ার চাপ আর সহ্য হয় না। কোনটে (কোথায়) যাই,কারকাছে গেলে একটু মাথা গোঁজার ঠাই পামু (পাবো)ভাই এভাবেই সাংবাদিকদের কাছে আকুতি করছে ভুমিহীন ও গৃহহীন তাহেরা বেগম। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মিলছে না অসহায় এই নারীর কাঙ্খিত মাথা গোঁজার ঠাই।
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের মধ্য পবনতাইড় গ্রামের বাসিন্দা অসহায় তাহেরা বেগম। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁেধর পশ্চিম পাশেই অন্যো জমিতে বাঁশঝাড়ে একটুকরো জায়গায় সাময়িক ভাবে আশ্রায় নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন পার করছেন সে। প্রায় ৪৭ বছর বয়সী এই নারীর ১৫ বছর আগে প্রথম স্বামী মারা গেলে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তাহেরা। বিয়ের সময় ভেবে ছিলেন বাকী জীবন হয়তো স্বামী সংসারে ভালো ভাবেই কাটাবেন । কিন্তু বেশী দিন টেকেনি স্বামীর সংসার ।
স্বামী অন্যত্রে বিয়ে করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন তাহেরাকে। নিরুপায় হয়ে ঘুড়িদহ ইউনিয়নের খামার পবনতাইড় এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে মাথাগোজার ঠাই নিয়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য ভিক্ষাবৃত্তি পেশা বেছে নেন তাহেরা। অভাব অনটন সহ নানাবিধ কষ্ট বুকে ধারণ করে তিনি বাঁধেই পাড়ি দেন প্রায় ১৬ বছর। এরই মাঝে গত ৫/৬ মাস আগে বাঁধটি সংস্কারের লক্ষে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধের সকল বাড়ি-ঘর উচ্ছেদ করে এসময় তাহেরা বেগমের ঘরটিও উচ্ছেদ করা হয়।
এরপর নিরুপায় হয়ে আকুতি মিনতি করে কিছু দিনের জন্য আশ্রায় নেয়ার কথা বলে স্থানীয় এক লোকের কাছ থেকে একটুকরো জায়া নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে যে বসতঘরটিতে রয়েছেন তাও আবার নির্জন স্থানে বাঁশঝাড়ে। সেখানে জনমানবহীন স্থানে একাকী ঘরে ভয় শঙ্কা নিয়ে বসবাস করছেন।
এদিকে ৫ মাস অতিবাহি হতে নাহতেই জায়গা থেকে সরে যাওয়ার চাপ সৃষ্টি করছেন জায়গার মালিক। অসহায় তাহেরা বেগম বলেন, সাঘাটা উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর জায়গা জমি ও বাড়ি-ঘর আছে এমন মানুষকে দেয়া হয়েছে। অথচ আমার মত হতভাগি ভাগ্যে জুটছে না একটি ঘর। আমি একটি ঘরের জন্য চেয়ারম্যান,মেম্বারদের কাছে গিয়েছি। কিন্তু টাকা না দিতে পারায় কোন কাজ হয়নি। পরে ইউএনও স্যারের কাছে কয়েকবার গিয়ে ঘরের জন্য আবেদন করেছি।
তিনি দিবেন বলেছেন, তবে এখন পর্যন্ত আমি ঘর পাইনি। বর্তমানে আমি যে ঘরটিতে বাস করছি সে ঘরটির অন্যোর জায়গায়, যে কোনো মুহুর্তে এখান থেকে সরে যেতে হবে। তাহেরা আরও বলেন, স্বামী থেকেও নেই ১৫ বছর ধরেই ভরনপোষন দেয়না স্বামী। কখনো মানুষের বাসায় ঝিয়ের কাজ করে কখনো ভিক্ষাবৃত্তি করে কোনোরকমে বেঁচে আছি। শরীরেও বাসা বেঁধেছে অনেক অসুখ। তাই এখন আর ঠিকমত কাজও করতে পারি না। সরকারের কাছে দাবী, আমাকে একটি বসত ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার। তাহলেই বাকী সময় টুকু মাথা গোজার ঠাই নিয়ে ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারবো।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনিসুর রহমান (অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত) বলেন, নতুন করে সরকারী ঘর নির্মাণ কাজ চলছে । কাজ সম্পন্ন হলে ভুমিহীন ও গৃহহীদের মধ্যে ঘর গুলো বরাদ্দ দেয়া হবে, তখন আবেদন পেলে দেয়া যাবে।